
শনিবার (১৩ জুন) ২৭৫ আসন বিশিষ্ট নেপাল সংসদে এই বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ২৫৮টি। কাঠমান্ডু এই সংশোধনীতে ভারতীয় ভূখণ্ডকে মানচিত্রে ঠাঁই দিয়েছে বলে অভিযোগ ভারতের
কূটনীতিবিদদের আশঙ্কা, এই বিল পাস হওয়ায় নেপাল-ভারত কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়বে।
গত মাসেই নেপাল সরকার সংশোধিত মানচিত্রে সিলমোহর বসিয়েছে। মূলত কালি নদীর উত্তর-পূর্ব এলাকা নিয়েই বিতর্ক। ভারতের দাবি, ওই এলাকার লিপুলেখ পাস উত্তরাখণ্ডের। পাশাপাশি লিম্পিয়াধুরা আর কালাপানি এলাকা সেই ১৯৬২ থেকে ভারতের সীমানার অংশ বরাবর দাবি করেছে ভারত। কিন্তু সংশোধিত মানচিত্রে এই এলাকাগুলো নিজেদের বলে মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে নেপাল।
নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমাণ্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়, বিলটি পাস হওয়ার পর নেপালের আইনসভার স্পিকার অগ্নি সাপকোটা বলেন, ‘সভায় উপস্থিতি ২৫৮ সদস্যের সবাই বিলটির স্বপক্ষে ভোট দেওয়ায় এটি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পেয়ে গৃহীত হয়েছে বলে আমি ঘোষণা করছি।’
সংবিধান সংশোধনী এই বিল পাস করতে বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে নেপাল। এই অধিবেশনে ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে আনা সংশোধনের ওপর ভোটাভুটি হয়। বিলটি পাস করাতে খুব ঝামেলায় পড়তে হয়নি সরকারকে। বিরোধী দল নেপাল কংগ্রেসও বিলের সমর্থনে সম্মতি দিয়েছে।
তিব্বতের মানস সরোবরে লিপুলেখ হয়ে নতুন সড়ক চালু করার পর নতুন এই মানচিত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয় নেপাল। গত মাসে নেপাল যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, সেখানে দেখা যায় কালী নদীর পূর্ব পাশের এক চিলতে ভূমিকে (প্রায় ৪০০ বর্গ কিলোমিটার) দেশটি তাদের মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত করে, যা ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নেপালের উত্তর-পশ্চিমের প্রান্তের ওই এলাকার মধ্যে পড়েছে উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ এবং কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা এলাকা। এগুলো ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকেই নয়াদিল্লির কাছে কৌশলগতভাবে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই এলাকাগুলো এত দিন উত্তরাখণ্ড রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল হিসেবেই ভারত বিবেচনা করেছে। কৌশলগত অঞ্চল হওয়ায় এগুলোর জন্য রয়েছে ভারতের বিশেষ প্রহরাও।
ভারতের দাবি, নেপালরাজের বিরুদ্ধে ১৮১৪ সালে যুদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পটিয়ালা ও সিকিমের রাজারাও কোম্পানির হয়ে যোগ দেন সে যুদ্ধে। দু বছর ধরে চলা সে যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন নেপালরাজ। ১৮১৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে সন্ধি করেন তাঁরা। বিহারের সুগৌলীতে হওয়া সেই সন্ধিপত্রে নেপালের সীমানা নতুন করে নির্ধারিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমে মহাকালী থেকে পূর্বে মেচি পর্যন্ত এলাকা নেপালরাজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে স্থির হয়। দু শতাধিক বছর ধরে নির্ধারিত এই সীমা নিয়ে এখনকার বিপত্তির মূলে রয়েছে মহাকালীর প্রকৃত উৎস নিয়ে বিতর্ক।
প্রসংগত, ১৯৫০-এর দশকে চীন তিব্বত দখল করার পর নেপাল-চীন সীমান্তে বেশ কিছু সামরিক চৌকি বসিয়েছিল ভারত। নেপালের অনুমতি নিয়ে বসানো সেই চৌকিগুলো ১৯৬৯ সালে ভারতকে সরিয়ে নিতে বলে দেশটি। সে অনুযায়ী ভারত ১৭-১৮টি চৌকি সরিয়ে নেয়। কিন্তু সেখানে কালাপানি ছিল না। নেপালও আর আপত্তি করেনি। এর পরের দশকগুলোতেও কালাপানি, লিপুলেখ বা লিম্পিয়াধুরা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে লিপুলেখ, কালাপানি, লিম্পিয়াধুরা নিয়ে নেপাল জোরালো দাবি জানাতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমে বিষয়টি নিয়ে তারা সোচ্চার হয়। শেষ পর্যন্ত আজ এ সম্পর্কিত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব দেশটির আইনসভায় পাস হলো।
নেপালি সংসদে বিলটি পাস হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত এখন পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এক ভারতীয় কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, সীমান্ত বিরোধ ও ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধির উদ্যোগে নেপাল সরকারের কাছে নোট পাঠিয়েছে নয়া দিল্লি।
More Stories
করোনা হাসপাতালের প্রতি আস্থা না থাকায় বেড খালি থাকছেঃ মির্জা ফখরুল
বাইডেনই হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টঃ ট্রাম্প
কাশ্মীরে ২০০ যুবক নিখোঁজ, নতুন শঙ্কায় ভারত