
২৭শে মে, লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে একদল মানব পাচারকারী। ওই ঘটনায় আরো ১১ জন আহত হন। ঘটনার পরেই মানবপাচারকারিদের ধরতে জোর অভিযান শুরু করে গোয়েন্দারা। এ পর্যন্ত ২২ মামলায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লিবিয়ার বেনগাজি ও জোয়ারার বিভিন্ন নির্যাতন ক্যাম্পে এখনো কয়েকশো বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি আছে। ডিবি পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশে ৬ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে আরো অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে আসছে। গ্রেফতার ছয় জনের হাত ধরেই ২৮ মে লিবিয়ার মিসদাহ মরুভূমিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশি পাচার হয়েছিলেন। বরাবরের মতো ঢাকা-দুবাই-তিউনিশিয়া-কলকাতা-বোম্বে এ চারটি আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করা হয় বলে তারা জানিয়েছে।
মামলার তদন্তে প্রতিদিনই বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। সোমবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছয় মানবপাচারকারিকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দারা বলছেন, দেশ থেকে মোট চারটি রুটে মানব পাচার হয় লিবিয়াতে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লিবিয়া, পরে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে লোক সংগ্রহ করা হয়। এরপর কয়েকভাগে তাদেরকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-বেনাপোল-কলকাতা- বোম্বে-দুবাই-তিউনিশিয়ার কয়েক রুটে নানা কৌশলে লিবিয়ায় পাচার করা হয়।
মূলত এ কাজে নোয়াখালীর কাজী ইসমাইলের নেতৃত্বে ৪৫ জনের একটি চক্র কাজ করছে। এছাড়াও অর্ধশত পাচারকারি বিভিন্ন রুটে সক্রিয়। এই গ্রুপের সদস্যরা প্রথমে গ্রাম থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করে। পরে পাসপোর্ট থেকে শুরু করে বিমানের টিকিট করা পর্যন্ত আরেকটি দল কাজ করে। এরপর নানা রুট হয়ে তাদের লিবিয়াতে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি দালালরা তাদের নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ রুট ব্যবহার করে ইউরোপে পাঠানোর ব্যবস্থা করে আরেকটি চক্র। আর একাজে তাদের সাহায্য করে লিবিয়ার মিলিশিয়ারা।
লিবিয়ার বিভিন্ন এস্টেটে কাজ ও লিবিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি দালালরা অন-অ্যারাইভাল ও ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে লোকজনকে লিবিয়ায় পাচার করে। পাচারের পর ভিকটিমদের লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রেখে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে। ভিকটিমদের কান্নাকাটি, আকুতি-মিনতি করা অডিও অথবা সরাসরি মোবাইলে কথাবর্তা বাংলাদেশে অবস্থানরত ভিকটিমদের স্বজনদের পাঠিয়ে অর্থ আদায় করে। প্রতিদিনই তাদের ওপর নির্যাতন চলে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) জানান, প্রায় অর্ধশত পাচারকারী ইউরোপের ছয়টি দেশে মানবপাচার করতে ও মুক্তিপণ আদায় করতে অসংখ্য নির্যাতন ক্যাম্প পরিচালনা করছে। যার ২২টি শনাক্ত করতে পেরেছে ডিবি। তিনি বলেন, লিবিয়াতে যে মিলিশিয়া গ্রুপ আছে তাদের সহযোগিতায় এ ক্যাম্পগুলো চালায় তারা। বাংলাদেশ থেকে অর্থের বিষয়ে একটা লেনদেন তৈরি করে থাকে। আমরা সেই বিষয়টি তদন্ত করবো। যারা এর সঙ্গে জড়িত, যারা ইতোমধ্যে লিবিয়াতে আছে এবং লিবিয়া থেকে যারা এই অর্থের লেনদেন করে তাদের ধরার জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সম্প্রতি লিবিয়ায় মানবপাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় ১২ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। সোমবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। দ্রুত মামলার চার্জশিট দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। গ্রেফতারকৃতদের পল্টন ও তেজগাঁও থানায় মানবপাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। এই চক্রের অন্যদের ধরতেও তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
More Stories
দেশব্যাপী বোমা হামলার ১৫ বছর আজ
টেকনাফে সিনহা হত্যায় ১৬ আগস্ট গণশুনানি
করোনার নমুনা পরীক্ষার ফি প্রত্যাহার চায়: ড্যাব